(বড়মাসি অস্ট্রেলিয়াতে ৪০ বছর কাটিয়ে সদ্য কলকাতা ফিরেছে)
দুপুরবেলা, তীব্র গরম পড়েছে। ফুলস্পিডে পাখা চালিয়ে দিদু আর বড়মাসি খেতে বসেছে। গৌরদা (দিদুর বাজার সরকার/লোকালগার্জেন/অ্যাসিস্ট্যান্ট) পরিবেশন করছে - মুসুর ডাল, আলু-কুমড়ো-সেদ্ধ-নুন-তেল, ভাত, বড়ি দিয়ে মাছের ঝোল, কাঁচা আমের চাটনি, টক দই।
বড়মাসি বেশ আনন্দে আছে। মিনারেলজল খাচ্ছে না, রেগুলার বাইরে খেয়েও পৈটিক গোলযোগ হয় নি, কলকাতার গরম তাকে কাবু করতে পারে নি। জাহাজে তার অনেক জিনিস আসছে, তার মধ্যে দুটো টেনিস র্যাকেট, একটা পাউরুটি-মেশিন আর একটা খাতার কথা আমরা সমানে শুনছি। "সেইবার আমরা ক্রুজে গিয়ে একটা কি দারুণ জিনিস দেখলাম জানিস তো, লাল মত, পেটের কাছটা নীল...দাঁড়া, আমার খাতা আসছে, ওতে সব লেখা আছে" কিম্বা "চাইনিজ রাজকন্যাগুলো কি সুন্দর! সিল্কের ওপর সিল্ক পরেই যাচ্ছে পরেই যাচ্ছে, কোমরে এই মোটা সোনার বেল্ট তাতে নানারকম জেড আর রুবি বসান...ছবিটা আমার খাতায় আছে..."
যাই হোক, দুপুরবেলা বড়ঘরের খাবার টেবিল।
গৌরদা বড়মাসির থালায় ডাল দিতে দিতে বলল "বাড়িটা তো চিড়িয়াখানা বানিয়েছেন ভাল। দুটো গিধনি পাখি নিয়ে আসুন এবার, পায়ে দড়ি বেঁধে দেবেন, ছাদে উড়ে বেড়াবে।"
বড়মাসি উৎসাহিত "গিধনি পাখি কিরে? হাতিবাগানে পাওয়া যায়?"
গৌরদা সবজান্তা হেসে "কি যে বলেন! ওকি পোষা পাখি? ও থাকে পাহাড় চুড়ায়, জোড়া বেঁধে। একা ওরা বাঁচেনা, আর ধরলেও বাঁচেনা"
বড়মাসি বিভ্রান্ত "এই যে বললি পুষতে? ঠাট্টা করলি বুঝি?"
গৌরদা ক্ষুণ্ণ "না না! আমরা দেশের বাড়িতে ওদের ডাক শুনেছি, এই বড় বড় পাখি! যে সাপের মাথায় মানিক থাকে, সেই সাপ খায় ওরা। সাপের মাথার মানিক জানেন তো? নাকি অশটেলিয়াতে থেকে সব ভুলে গেছেন?
বড়মাসি উত্তেজিত "সাপের মাথায় মানিক? কই আমি দেখিনি তো? সিডনি জুতে অবশ্য সাপের দিকটা আমি বেশি যেতাম না - ওগুলো বড্ড কিরম যেন লাগে - কিন্ত নিকিকে বলতে হবে, ওর এসব হিস্ট্রি জানা দরকার!" (নিকি বড়মাসির নাতি)
গৌরদা খুশি হয়ে "হ্যাঁ, আমি তাই বলছি! সাপ মাথার মানিক রেখে সেই আলোতে পাখিটাখি ধরে খায়। আর গিধনি সেই সাপ খুঁজে বার করে, আর যাদের পোষা হয়, তারা বড়লোক হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের দেশের রাজাগজারা খুব বদমাশ, সব মানিকটানিক ওরাই নিয়ে নেয়, গিধনির মালিক কিছু পায় না। গরিবমানুষের কত কষ্ট বলুন। আর এই যে ভোট আসছে, আবার একগাদা মানুষ মরবে, রাজারা আরো বড়লোক হবে। সাধে কি দেশটা সাহেবরা ... "
ফোঁস করে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে গৌরদা রান্নাঘরে দই আনতে গেল।
বড়মাসি এদিকে মহা চিন্তায় পড়েছে, নিকিকে না জানানো অব্দি শান্তি নেই। " এইসব ফোকটেলের কিছু বই আনিস তো, পম্পি? নিককে পাঠাতে হবে। ও খুব ভালবাসে বই পড়তে, ওর বারো বছর হলে বন্ধুদের নিয়ে এখানে আসবে বলেছে, আমাদের এই বাড়িটা ওর দারুণ পছন্দ। কিন্তু...আমি কোনোদিন গিধনি পাখি... আচ্ছা গৌর ইয়ার্কি মারছে, না? "
দিদু এতক্ষণ এই আষাঢ়ে কথোপকথনে পাত্তা না দিয়ে মনোযোগসহকারে মিলিকে আমের চাটনি খাওয়াচ্ছিল, হঠাৎ খেয়াল করল বড়মাসি শুকনো হাতে বসে আছে। "রাণু? বসে আছ কেন? পেট ভরেনি বুঝি? আরেকটু চমচম খা। আর ওইসব সাপটাপ আমার ভাল লাগে না, গৌরকে মারব আমি, আজেবাজে কথা বলে মাথা ধরিয়ে দিল। গৌর? রানুকে চমচম দিয়ে দই দে, আর একটা কথাও বলবি না। যা তুই খেতে বস। রানু, যাও হাত ধুয়ে একটু শুয়ে নাও, অনেক বেলা হল।"
চুরাশি-বছুরে মায়ের আদেশে পঁয়ষট্টি-বছুরে মেয়ে চটপট উঠে হাতমুখ ধুয়ে নাকে চশমা এঁটে সটান ডিভানে শুয়ে "Silk Route" এর পাতায় মগ্ন হয়ে পড়ল।
(২০০৫, এপ্রিল মাস)
তোদের বাড়িতে এইরকম ইন্টারেস্টিং লোকজনের সমাহার কি করে হয়েছে? সিক্রেটটা জানা দরকার।
ReplyDeleteআমাদের বাড়ির জলের ট্যাঙ্কে পাগলামির পল্যুশান আছে আর আমরা বাসিন্দারা ওই aura emanate করি। তাই আমার অপর নাম ম্যাড-নেট। আরো আরো ম্যাড আমার নেটে এসে পড়ছে রোজরোজ!
ReplyDeleteএটা পুরো ছাপ-মারা লীলুপিসি। জাস্ট কোনো কথা হবেনা!
ReplyDeleteআর, গিধনি না থাকলেও তোদের বাড়িতে তো পাখির অভাব নেই, তাই না?
কাক চড়াই শালিক ধরনের আছে। ওই অন্যগুলো পটলোৎপাটন করেছে।
ReplyDelete