November 3, 2020


সে অনেক কাল আগের কথা, যখন ছোট ছিলাম। আমাদের নানারকম পরীক্ষা সামনে, তায় আবার শীতকাল। দাদার বোধহয় WBCS পরীক্ষা, আমার হায়ার  সেকেন্ডারির টেস্ট, ভাইকিং এর অ্যানুয়াল নাকি প্রিটেস্ট এরম কিছু একটা। 

তো, আকাশে বাতাসে প্রভূত পড়াশোনা। পড়ার চেয়ে পড়ার প্ল্যান বেশি হচ্ছে। অনেক রুটিন তৈরী হয়েছে, দিনে কত ঘন্টা পড়া কত ঘন্টা ঘুম কত ঘন্টা খাওয়া সব হিসেবে গুনে গেঁথে কাগজে লেখা হয়েছে, টেবিলময় বই খাতা পেন পেন্সিল সার সার সাজানো। জোর কদমে প্রিপারেশন চলছে।

এর মধ্যে আমার মাথায় একটা ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া এলো, যে আমরা রাত্তির জেগে এক সাথে পড়া করবো। দাদা, ভাইকিং উৎসাহিত হয়ে দুপুরে একটু ঘুমিয়ে নিলো। রাত্রে খাওয়াদাওয়ার পর ওপরের ঘরে আমি, দাদা, ভাইকিং, কম্বল, লেপ, তাকিয়া, বালিশ, বইপত্তর, চানাচুর, এক ফ্লাস্ক কফি, বিস্কুট, সবাই বেশ গুছিয়ে বসলাম। ভাইকিং অবশ্য একটু পরে শুয়ে পড়লো কারণ উপুড় হয়ে না শুলে ওর নাকি পড়া মাথায় ঢোকে না. জোর কদমে লেখাপড়া হতে লাগলো।

ইকোনমিক্সের একটা চ্যাপ্টার শেষ করে একটু কফি খাবো বলে উঠলাম। ভাইকিং আর দাদা ও আড়মোড়া ভেঙে হাই তুলে বিস্কুটের কৌটো খুলে বসলো। বোরবোন বিস্কুট ও কফি সহযোগে জলখাবার খেয়ে আবার পড়তে বসবো, কিন্তু নোনতার পর একটু মিষ্টি না খেলে কির'ম  একটা খালি খালি ফিলিং হয় না? অগত্যা রান্নাঘরের জালি আলমারি থেকে নাড়ু বার করা হলো। অতঃপর আবার বিদ্যাভ্যাস|

গড় গড় করে পড়া চলছে। দাদা পাতার পর পাতা লিখে চলেছে, আমি বুলেটপয়েন্ট দাগাছি, ভাইকিং  জিওগ্রাফি হজম করছে। ভাইকিং এর পশ্চারটা একটু বলি, খুপি ইন্টারেষ্টিং। উপুড় অবস্থা, কনুইতে ভর দিয়ে দুই গালে হাত, হাঁটু ভাঁজ করা, দোদুল্যমান গোড়ালি, দুই কনুইয়ের মাঝে খোলা বই। যতক্ষণ পা দুলছে, ততক্ষণ  জলবৎ তরল হয়ে পড়া মাথায় ঢুকছে। পা আটকে গেলেই কেলো, মানে গো চেং লেওন ল্যাং মেরেছে। এই দোলাচলে বোধহয় রাত্তির দুটো বাজলো। 

ভাবছি একটা টিপিন ব্রেক নিই, হঠাৎ দেখি ভাইকিং এর পায়ের দোলন বন্ধ আর দাদা গুটিগুটি চেয়ার থেকে উঠছে, আর ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে আমায় শব্দ করতে মানা করছে। তাকিয়ে দেখি ভাইকিং উপুড় হয়ে, সামনে বই খুলে, আকাশবাগে ঠ্যাং তুলে, জাস্ট ঘুমোচ্ছে। সোডার মতো বুড়বুড়ি কাটা হাসি পাচ্ছে, কোনোমতে চেপে বসলাম । দাদা সন্তর্পণে বইটা ভাইকিং এর হাতের মাঝ থেকে তুলে সরিয়ে নিলো। তারপর মিহি করে ডাকলো "ভাইকিং?"
উত্তর "হ্যাঁ "
প্রশ্ন "কি করছিস"?" 
উত্তর "পড়ছি" 
প্রশ্ন "কি পড়ছিস?"
উত্তর "জিওগ্রাফি"
প্রশ্ন  "বই কই?"
উত্তর "এই তো বই" ... ফাইনালি চোখ খুলে ..." আরে! ফ্যান্টাস্টিক! বই নেই! আমি তাহলে কি পড়ছি?"

বলা বাহুল্য, সেই রাত্তিরে আর ফারদার পড়াশোনা হয় নি। আমরা বিস্কুট চানাচুর কফি শেষ করে ফ্রিজ খুলে দাদুর প্রসাদের ফল মিষ্টি সাবড়ে অজস্র হাহা হিহি আড্ডা মেরে ভোর চারটে নাগাদ ঘুমোতে গেলাম।