September 27, 2012

ঝটিকা সফর - ৩


আমি আবার একটু hypochondriac আছি, যেটাকে মা বলে ভ্যানতাড়া আর প্রদীপ্ত বলে Munchausen Syndrome। রোববার সকালে যেন শুনলাম মশার পিনপিন শব্দ, তিড়িং করে ঘুম পালিয়ে গেল। খবর কাগজ চা বিস্কুট টেবিলে গুছিয়ে পা গুটিয়ে বসলাম, কিন্তু পায়ে কুটকুট করছিল।

মা গম্ভীরসে বলল "আমাদের বাড়ির মশায় ডেঙ্গু হয় না, ওরা আমগাছের মশা"। তারপর স্বপক্ষসমর্থনে শম্পা, সুনীতা, সুমিত্রাদি সবাইকে সাক্ষী দেয়ালো "বল? তোদের মশা কামড়েছে কিনা? (মস্তকহেলন) ডেঙ্গু হয়েছে? কিছু হয়েছে? (মস্তকদোলন) ব্যাস কিছু হয় নি পায়ে, আর ধুনোর গন্ধে আমাদের asthma হয়"। তাও সিট্রোনেলা মোমবাতি জালিয়ে টেবিলের তলায় স্থাপন করলাম, পিঙ্গুর নাক বাঁচিয়ে।

খেলার পাতাটা পড়ছি, মামী এসে পড়ল "টুলুদি আমায় একটু চা পাতা দাও, দুধটাও জ্বলে গেছে" (মামী রেগুলার গ্যাসে দুধের কড়া বসিয়ে ব্যাঙ্কে যায়)
মামীকে বললাম "দেখেছ পোনোবদা এসেছে কলকাতায়, সবুজ কার্পেট পেতে দিদি ওয়েলকাম করেছে।"
মামী অবাক হয়ে বলল "সেকি, খরাজ আজকাল এখানে থাকে না?"
তারপর আমার ?? মুখ দেখে বলল " ভূতের ভবিষ্যৎ এর প্রমোদ প্রধানের কথা বলছিস তো? ওটা খরাজ ছিল, পল্টনের বন্ধু খরাজ রে।"
আমি মিহি করে বললাম "পোনোবদা মানে প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখোপাধ্যায় মামী।"
"ও, দেখেছিস, মাথাটাই গেছে "

এই ফাঁকে বনিকে জিজ্ঞেস করলাম, তোকে মশা কামড়েছে? অম্লানবদনে উত্তর এলো - হ্যাঁ, রোজ কামড়াচ্ছে, তোর ব্লাডগ্রুপটা জানিয়ে রাখ। শুনেটুনে চারদিকে RAID স্প্রে করলাম। মহা ঝঞ্ঝাট তো!

চিন্তিত ভাবে Mocambo পৌঁছলাম, সেখানে অভিষেক সপ্তদ্বীপা এলিনা দেবজ্যোতি ঋষিরাজ দীপাঞ্জনের সাথে লাঞ্চাড্ডা। একজন ওয়েটারকে জিজ্ঞেস করা হল মশা তাড়ানো কয়েল আছে কিনা, তারপর ভাগ্যিস পা গুটিয়ে বসেছিলাম, কারণ কাদের কাদের যেন কামড়াল। এদিকে অভিষেক "ঘৃণা লজ্জা ভয় তিন থাকতে নয়" পলিসিতে এদিক ওদিক টেবিলের দিকে আঙুল দেখিয়ে ওয়েটারদের জিজ্ঞেস করছে "আচ্ছা ওরা কি খাচ্ছে? ওটা কি বলুন তো? ওই ওরা যেটা খাচ্ছে, সেটা দু প্লেট দেবেন। দাঁড়ান দাঁড়ান, এটা কি নিয়ে যাচ্ছেন, বেশ দেখতে - এটাও দু প্লেট দেবেন।" 

এর মধ্যে সামনের টেবিলে তিনজন এসে বসলেন, ভদ্রলোকের বয়েস হবে ষাটের কোঠায়, এক মহিলা পঞ্চাশের আশেপাশে, অন্য মেয়েটি হয়তো ত্রিশ। অত্যন্ত অবান্তর গেসিং গেম শুরু হোল - আচ্ছা উনি কি পাত্রী দেখতে এসেছেন? কোনজন পাত্রী? নাকি অনলাইন আলাপ, আজ প্রথম দেখা, গার্ড দেওয়ার জন্যে মেয়েকে নিয়ে এসেছেন? নাকি বিছড়া হুয়া পুরনো প্রেম? মুখের অভিব্যাক্তি দেখছিস? এটা পুরনো আলাপ হতেই পারে না.. আমরা খুব ইনভল্ভড হয়ে পড়লাম। গলার আওয়াজ কারুরই কম না, পাশের টেবিলের ছেলেটা আমাদের কথোপকথনে উসখুস করছিল, হঠাৎ সপ্তদ্বীপা তার পায়ের কাছে গড় হয়ে "ব্যাগটা পড়ে গেছে দেখি একটু" বলায় বেজায় খচে গেল। 

এত কিছুর পরেও আমরা লোকলজ্জা ত্যাগ করে নানা উপাদেয় খাদ্যাদি সাঁটিয়ে প্রভূত আড্ডা মেরে বাড়িমুখো হলাম। চকোলেট দেবজ্যোতি আর ঋষিরাজ ভাগ করে নিল, ৮০-৪০ ওজন অনুপাতে।

সন্ধ্যেকাল। বেকবাগানে কাকিমার জন্মদিনের নেমন্তন্ন। সেজেগুজে পৌঁছে গেছি, কাবাব খেতে খেতে কাকিমা ঋতশ্রী মামী মা বনি সবাইকে আমার বুটক্যাম্পের গল্প শোনাচ্ছি - এই করতে হয়, ওই করতে হয়, পুশআপ, স্কিপিং, "দেখেছ আমার কি মাসল হয়েছে হাতে?" (বনি পাঞ্জা লড়ার প্রস্তাব দিয়েছিল...মাথা খারাপ নাকি, তারপর ভাঙা হাত নিয়ে ফিরতে হবে) এই সব কথা হচ্ছে আর সব্বাই অকারণে হাসছি। মামীও খুব হেসে বলল " হ্যাঁ, ঠিক মেরী ডট কমের মত "।

ইফ কম ইজ হিয়ার, ক্যান ডট বি ফার বিহাইন্ড?

দারুণ দারুণ সব রান্না হয়েছিল, খেয়ে দেয়ে বাড়ি এসে ভাইকিংকে ফোনে বিস্তারিত বিবরণ শোনালাম। ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল " যা তোরাই তাহলে আনন্দ কর "

আর ও ব্যাটা যে পুজোর কলকাতায় এসে আনন্দ করবে? তার বেলা?

2 comments:

  1. আমি যেটা করেছি তার মধ্যে আদৌ অস্বাভাবিক কিছু নেই।

    ReplyDelete
  2. পরের বার আলাদা টেবিলে বসবি।

    ReplyDelete

Leave a comment