আমরা অবশ্য খোদ ষষ্ঠী ঠাকরুনের পুতুল বানাবো না, সেটা মামীর ডোমেইন। আমরা বানাবো ছানাপোনা - একটা ছোটো গুল্লি দিয়ে মুন্ডু, একটা বড় গুল্লি দিয়ে ধড়, সেটা থেকে বড়ির নাকের মত টেনে টেনে হাত পা, কালোজিরে দিয়ে চোখ - হয়ে গেল ষেটের বাছা। এহেন শিল্পকর্ম সম্পন্ন করে নিজেরাই হেসে কুটিপাটি, তারপর আবার বেড়াল পুতুলটা দেখে মাকড়সা মনে হচ্ছিল কারণ হাত পা লেজ গোঁপ সবই এক সাইজ। মামীর ষষ্ঠী পুতুলের লাল টিপ, লাল পাড় শাড়ি, তেনাকে পিঁড়িতে বসিয়ে কোলে কাঁখে পোনাদের স্থাপনা করা হল, পেছনদিকে একটা বটগাছের ডাল দিয়ে এক টুকরো স্নিগ্ধ সবুজ চালচিত্র হলো, শাঁখ বাজলো, ধুপ জ্বললো। বাইরে তখন আষাড় মাসের "ছায়া ঘনাইছে"।
এর মধ্যে মাসি মেসো দাদা দিদি এসে পড়েছে, বানা বানানো শুরু হয়ে গেছে। একটা কাঁঠাল পাতায় একটু করে লিচু, জাম, আম, নারকোলকোরা, দই, ক্ষীর, কাউনের চাল, মিষ্টি। কিছু অ-কাঁঠাল, কিছু স-কাঁঠাল। এই পাতার মধ্যের মিক্সচারটা অনবদ্য খেতে - আর অবলীলায় সুরুত করে মুখে ঢুকে যায়। তারপর পাতাটা চেটে, প্লেটে গুছিয়ে রাখতে হয়, কারণ পরে গোনা হবে কে কটা খেয়েছে।
সে তো পরের কথা, ঠাকুরের ভোগে লোভ দিতে নেই - আপাতত থালায় সারি সারি বানা শোভা পেতে লাগলো, আশেপাশে পঞ্চপ্রদীপ কর্পুর জলশঙ্খ ইত্যাদি আরতির নানা উপচার। প্রদীপ জ্বালা হলো, শাঁখ কাঁসর ঘন্টা বাজলো, ঘটাপটা করে পুজো শুরু হলো। নিবেদন, আরতি, পাঁচালি, শান্তিরজল। ব্যাস, এইবার আসল আনন্দ শুরু। দিদু তার সব সন্তানদের পাখা দিয়ে হওয়া করে, হাতে হলুদ সুতো বেঁধে দিল। এরপর আমরা সারসার মাথা পেতে নিলডাউন হলাম, এক ধারসে তিন-চারটে পাখা আর দুব্বোঘাসের জলের ছিটে পড়তে লাগলো, সঙ্গে ছড়া - "কাটল কাটল মাসির শাড়ি তবু বলি ষাট ষাট, কাটল কাটল পিসির নাক, তবু বলি ষাট ষাট " (যদিও এই উক্তি আমরা কোনদিন পরীক্ষা করি নি) গুল্লুও হাসিহাসি মুখে পাখার হওয়া খেল। তারপর আমাদের হাতে সুতো বাঁধন আর অনতিবিলম্বে সুতোর মধ্যে থেকে দুর্বা/বাঁশের শীষ খুলে ফেলন কারণ ওগুলো হাতে ফোটে। তারপরই হুড়োহুড়ি করে প্রসাদ বন্টন এবং ভক্ষণ - অচিরেই আশেপাশে খালি পাতা স্তূপীকৃত হলো। আর বিকেলে যারা আসবেন তাঁদের জন্যে কিছু রইলো না বলে কিছু বেসিক বানা আবার বানানো হলো।
এর পরে দুপুরের একসাথে খাওয়া - পাঁচ ভাজা নিমবেগুন লাল শাক (প্লাস কাসুন্দী), ডাল শুক্তো মাছ, করমচার চাটনি, দই মিষ্টি। মোয়া তক্তি নাড়ু গুলো বিকেলের জলখাবার খাওয়া হবে, সঙ্গে মুড়ি আর চা। রাত্রে বাবা মাংস রান্না করবে।
দিবাভোজের পরে দিবাআড্ডা - দিদুর বড় কার্পেটে তাকিয়া বালিশ নিয়ে সবাই গড়িমসি, সঙ্গে অজস্র হাহা হীহী, আষাড়ে গল্প, অকারণ পুলক, অনাবিল আনন্দ। বাইরে নীলমনি ফুল ঝরে পড়ছে, কৃষ্ণচূড়া কলকেফুল কালো মেঘের গায়ে রঙ্গীন চুমকির মত জ্বলজ্বল করছে। কাল থেকে আবার দৈনন্দিন জীবন শুরু, কিন্তু বাঙালীর তো বছরভর পাবন - রথ টানা, রাখি বাঁধা, ঘুড়ি ওড়ানো...
আমাদের যৌথ পরিবার। শিকড় অভিন্ন রেখে দেশে বিদেশে যে ফুলেরা আজ ফুটে আছে, সবাই সেই পি ৫৪৪ এর সৌরভের সাথী।
এর মধ্যে মাসি মেসো দাদা দিদি এসে পড়েছে, বানা বানানো শুরু হয়ে গেছে। একটা কাঁঠাল পাতায় একটু করে লিচু, জাম, আম, নারকোলকোরা, দই, ক্ষীর, কাউনের চাল, মিষ্টি। কিছু অ-কাঁঠাল, কিছু স-কাঁঠাল। এই পাতার মধ্যের মিক্সচারটা অনবদ্য খেতে - আর অবলীলায় সুরুত করে মুখে ঢুকে যায়। তারপর পাতাটা চেটে, প্লেটে গুছিয়ে রাখতে হয়, কারণ পরে গোনা হবে কে কটা খেয়েছে।
সে তো পরের কথা, ঠাকুরের ভোগে লোভ দিতে নেই - আপাতত থালায় সারি সারি বানা শোভা পেতে লাগলো, আশেপাশে পঞ্চপ্রদীপ কর্পুর জলশঙ্খ ইত্যাদি আরতির নানা উপচার। প্রদীপ জ্বালা হলো, শাঁখ কাঁসর ঘন্টা বাজলো, ঘটাপটা করে পুজো শুরু হলো। নিবেদন, আরতি, পাঁচালি, শান্তিরজল। ব্যাস, এইবার আসল আনন্দ শুরু। দিদু তার সব সন্তানদের পাখা দিয়ে হওয়া করে, হাতে হলুদ সুতো বেঁধে দিল। এরপর আমরা সারসার মাথা পেতে নিলডাউন হলাম, এক ধারসে তিন-চারটে পাখা আর দুব্বোঘাসের জলের ছিটে পড়তে লাগলো, সঙ্গে ছড়া - "কাটল কাটল মাসির শাড়ি তবু বলি ষাট ষাট, কাটল কাটল পিসির নাক, তবু বলি ষাট ষাট " (যদিও এই উক্তি আমরা কোনদিন পরীক্ষা করি নি) গুল্লুও হাসিহাসি মুখে পাখার হওয়া খেল। তারপর আমাদের হাতে সুতো বাঁধন আর অনতিবিলম্বে সুতোর মধ্যে থেকে দুর্বা/বাঁশের শীষ খুলে ফেলন কারণ ওগুলো হাতে ফোটে। তারপরই হুড়োহুড়ি করে প্রসাদ বন্টন এবং ভক্ষণ - অচিরেই আশেপাশে খালি পাতা স্তূপীকৃত হলো। আর বিকেলে যারা আসবেন তাঁদের জন্যে কিছু রইলো না বলে কিছু বেসিক বানা আবার বানানো হলো।
এর পরে দুপুরের একসাথে খাওয়া - পাঁচ ভাজা নিমবেগুন লাল শাক (প্লাস কাসুন্দী), ডাল শুক্তো মাছ, করমচার চাটনি, দই মিষ্টি। মোয়া তক্তি নাড়ু গুলো বিকেলের জলখাবার খাওয়া হবে, সঙ্গে মুড়ি আর চা। রাত্রে বাবা মাংস রান্না করবে।
দিবাভোজের পরে দিবাআড্ডা - দিদুর বড় কার্পেটে তাকিয়া বালিশ নিয়ে সবাই গড়িমসি, সঙ্গে অজস্র হাহা হীহী, আষাড়ে গল্প, অকারণ পুলক, অনাবিল আনন্দ। বাইরে নীলমনি ফুল ঝরে পড়ছে, কৃষ্ণচূড়া কলকেফুল কালো মেঘের গায়ে রঙ্গীন চুমকির মত জ্বলজ্বল করছে। কাল থেকে আবার দৈনন্দিন জীবন শুরু, কিন্তু বাঙালীর তো বছরভর পাবন - রথ টানা, রাখি বাঁধা, ঘুড়ি ওড়ানো...
আমাদের যৌথ পরিবার। শিকড় অভিন্ন রেখে দেশে বিদেশে যে ফুলেরা আজ ফুটে আছে, সবাই সেই পি ৫৪৪ এর সৌরভের সাথী।
বাঃ চমৎকার লাগল পড়ে পুরোটা। (নাকি এর পরে আবার ষাট আশি-ও আসিবে?) তোর বর্ণনার ক্ষমতা খুব সুন্দর। ছবির মত।
ReplyDeleteKausik Da, apatoto etai :)
ReplyDeleteঅনবদ্য ভাবের সঙ্গে অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে যথাযথ ভাষার ব্যবহার। ভাব ও ভাষার এই মিলনকে কুর্ণিশ।
ReplyDeleteBeshi beshi bolcho eibar!
DeleteAmi kono din shoshthi dekhini. byapartai je ki tai jantam na. Eakhon bujhlam. goto bochhor jokhon amar ma jamai ke "jamai shoshthi wish" korte phone korechhilo, Abhishek bolechhilo, "erokom wish korle hobe na, aam pakha diye hawa ke debe?" Tar maneta eatodine bujhlam! :D
ReplyDeleteRini, porer bochor June mashe nemontonno roilo :)After all, chele ta amaro jamai to bote!
ReplyDeleteshundor lekha ....pore chotobelar onek kotha mone pore gelo....
ReplyDelete;-)
cheers
d
Thanks Dibhai. Toder dekhei shekha :)
Delete৬০-৬০ পড়ে সবাই বলেছিলাম আরো আসুক, ৬০-৭০ এ এসে সেটা পেলাম, খুব ভাল লাগলো।
ReplyDeleteতোমার হবে, মানে, এই এত সুন্দর করে ছবি-আঁকা-লেখা, তোমার হাতে আছে। কীপ ইট্ আপ!
-নীলুদা।
Thank you Neeluda. Cheshta korchi!
Deleteমানে, যেটুকু লিখেছিস্ খুব সুন্দর, কিন্তু এত ছোট কেন? আরো, আরো লম্বা লেখা চাই, আরো বর্ণনা চাই। মন ভরছিল, কিন্তু কীর'ম একটা ফুরিয়ে গেল। :(
ReplyDeleteEki, puro ta likhlam to!
Deleteতুমি খুব ভাল লেখো কিন্তু বড্ড কম ।মন ভরে না ।
ReplyDeleteমিঠু
Shobai dekhi tai bolche! Arektu ghono ghono post korar cheshta korbo.
DeleteChhorda, aarektaa jinish dekhlaam, jaaraa kaachhey nei taader naamey'o ghot'e paakhaa, dhaan durbo'r aashirbaad holo. Maa bon aar jaamaai'er naamey dilo. ei bhebei aanondo pelaam jebhaabei hok, ekkebaarey baad pori naa kono bochhor. :D
ReplyDeleteBoudi, amader shuto shob rakha ache, ar Ma eibar Facetime e jamai ke hawa koreche. Kintu khaddobostu gulo???
Delete