September 30, 2012

ঝটিকা সফর - ৪


সোমবার থেকে পুরোদস্তুর অফিস সুরু, তার আগে চট করে Select Stores যাব। গড়িয়াহাটার মোড়, মিনিমিনি বাসবাস, সঙ্গে ল্যাংবোট চিঙ্কি। সিমুর বিয়ে, কাঁথাস্টিচের শাড়ি কেনার প্ল্যান ময়ূরকণ্ঠী রঙের।
দোকানে গিয়ে  যদিও এই 'স্পেক' দিয়ে বলেছি শাড়ি দেখান, কোন এক অজ্ঞাত কারণে যে শাড়িগুলো দেখানো হতে লাগলো, সেগুলো না কাঁথাস্টিচ, না ময়ূরকণ্ঠী। সঙ্গে ম্যাজিশিয়ানের প্যাটার - "এইটা দেখুন, অনবদ্য কালার, অসাধারণ কাজ, এই এক পিসই পড়ে আছে"...অথবা  "এটা এই পুজোয় লেটেস্ট ফ্যাশন, কন্ট্রাস্ট দেখেছেন?" এর মধ্যে চা এসে গেছে এক রাউন্ড "আরেক কাপ চা দি, দিদিভাই?"

আমরা বৃথা তর্ক না করে বসে বসে গোটা পনেরো বিভিন্ন রং-রকম-দামের শাড়ি দেখে, একটাও পছন্দ না করে উঠি উঠি করছি "চল ওদিকটা যাই, ট্রেডার্স অ্যাসেম্বলি..." শাড়িকাকু মিনতি করলেন "দিদিভাই, এক মিনিট, আরেকটা জিনিস দেখে যান।" তারপর গলা খাদে করে রহস্যময় ভাবে ডাকাডাকি করলেন "মদনা - ভেতর থেকে ওই মালটা বার কর তো, যেটা পেশাল অর্ডারি" আবার পাঁচটা শাড়ি এসে পড়ল, এগুলো সুন্দর দেখতে কিন্তু একটাও কাঁথাকাজের না। যাই হোক, ধৈর্য শেষ, খিদে পেয়েছে, বাজখাঁই নামের বেশ জমকালো শাড়ি কিনে বাড়িমুখো হলাম।

এসে দেখি মা ওষুধের প্যাঁটরা খুলে বসেছে। এই প্যাঁটরাটা আমার, প্রতিবার রিফিল করা হয়, চেনা ওষুধ সঙ্গে থাকলে মনে বল পাই। মা এক একটা পাতা দেখছে আর আঁতকে আঁতকে উঠছে -
(মা) এমা, এটা তো ডেট এক্সপায়ার করে গেছে, ছিঃ ছিঃ এত্তগুলো ক্রোসিন... এহহে, র‍্যানট্যাকগুলো গলে গেছে তো..আচ্ছা আগেরবার যে ব্যাকট্রিম দিলাম, সেগুলো খাস নি?
(আমি) কি আশ্চর্য মা, দরকার না হলে খাব কেন? আমি অত ওষুধ খাওয়া পছন্দ করি না, গাদা গাদা অ্যান্টি বায়োটিক খেয়ে সব রেসিস্টেন্ট...
(মা) রেখে গেলেই পারতিস, আমরা খেয়ে নিতাম।
(আমি) খেয়ে নিতে? এটা আচার না মশলা যে অকারণে খেয়ে নিতে?
(মা) আহ আমি না খেলেও, এই ধর ববিতার কদিন আগে পেট খারাপ হল, তারপর চন্দ্রদীপের গ্যাস্ট্রাইটিস...(ববিতা গলি-সিঁড়ি-ছাদ ঝাঁট দেয়, চন্দ্রদীপ হোল ধোপা)

বাকরুদ্ধ হয়ে চান করতে গেলাম।

বর্ষার দুপুর - লুচি আলুরদম চাটনি খেয়ে, পিঙ্গুকে পান খাইয়ে, ল্যাপটপ বার করে ইমেল দেখব। তখনি কবি কাঁদলেন, অর্থাৎ ক্রোম বলল কানেকশান নেই। যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়। নতুন কাজ, বসকে বলে এসেছি কোওনো ব্যাপাআআর না, কলকাতা থেকে হইহই করে আপিস করতে পারব...এতো মহা গেরো! বিমর্ষ হয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছি - ওমা, দেখি আউটলুকে বানের জলের মতো ইমেল আসছে! ইদিকে কোনো ওয়েবপেজ খুলছে না - যাকগে যাক, জয় বাবা ফেলুনাথ, এযাত্রা চাকরিটা বজায় রইল। নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমোতে গেলাম - যাকে বলে ন্যাপ - আবার ৬টার মধ্যে উঠে পড়তে হবে।

বেখাপ্পা সময় কাজ - সন্ধ্যে ৭টা থেকে রাত্তির ৩টে। কিন্তু ঘনঘন কমিক-রিলিফ-ব্রেক, মিটিঙের ফাঁকে দরজা দিয়ে পিঙ্গুর উঁকি, মায়ের মাইম করে জিজ্ঞেস করা কতক্ষণ পরে খেতে বসতে পারব - এসব যখন দাঁড়িপাল্লার এদিকে বসাই, সময়ের বিদঘুটেপন তুশ্চু হয়ে যায়। আর, "কাঠে টোকা দিয়ে" আমার নতুন বসটা একটু পাগলী হলেও মানুষ ভাল, এই সপ্তাহে খটোমটো কিছু শিডিউল করেনি।

শুরু হল সোমবারের মিটিং টিটিং। 


7 comments:

  1. kantha stitch kinte giye ki kine anli ?! saree kaku convince korlo kibhabe ??!! e toh asombhab ghotona..

    prachondo agrohee jante magician toder baage anlo ki kore ! :D

    ReplyDelete
    Replies
    1. Katha gulo kirom jeno chilo, bekhappa shob motif - building, bus, ghuri - nothing remotely aesthetic or exclusive. Ei sari ta benaraser ki ekta, besh dekhte.

      Delete
  2. awsadharon likhcho kintu.. BTW, that sentence about bari theke office kora, and the small tidbits about that chaotic being at home feelings- makes my head reel with homesickness. Kottodin kolkatar ei moment gulo feel kori ni.

    ReplyDelete
  3. ভাল লিখছিস্‌। ওষুধ নিয়ে আমারও সাংঘাতিক বাতিক আছে। এক্সপায়রি ডেট পেরিয়ে গেলে ওষুধ ফেলে দিতে হলে আমি অত্যন্ত আপসেট হয়ে পড়ি।

    ReplyDelete
  4. আমি চন্দ্রদীপের সঙ্গে আলাপ করতে চাই। নয়ত জীবন বৃথা।

    ReplyDelete
  5. তুই তো রিওয়ার্ড কার্ডে পয়েন্ট এক্সপায়ার করলেও কান্নাকাটি করিস। আর চন্দ্রদীপ ওই টুটুস হাটের ঠিক উল্টোদিকে অবস্থান করে - আলাপ করে নিস।

    ReplyDelete

Leave a comment